করোনা ঝুঁকি ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। করোনা আক্রান্ত হয়ে এক হাজতীর মৃত্যুর পর গোটা কারাগারেই করোনা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তা, কর্মচারী সহ প্রায় ১১০ জনকে পাঠানো হয়েছে কোয়ারেন্টিনে। তবে- দুই মাস আগে কারা অভ্যন্তরে বন্দি হওয়া হাজতী কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন সেটি নিয়ে খোদ কর্মকর্তারাই দ্বিধা-দ্বন্ধে। কারন- গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মারা যাওয়া হাজতী কারো সংস্পর্শে আসেনি। এ কারনে করোনা উৎসের অনুসন্ধান চলছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। এখন আর বৃটিশ আমলের সেই পুরাতন কারাগার নয়।
শহতলীর বাদাঘাটে বর্তমান সরকারের শাসন আমলে নির্মিত একটি অত্যাধুনিক কারাগার। চলতি বছরের শুরুতে হাজতি এবং কয়েদিরা এই কারাগারে স্থানান্তর হন। ফলে নতুন এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দিরা এই কারাগারে বসবাস করছে। ধারন ক্ষমতার কম বন্দিও বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। ফলে কারাগারে প্রবেশ করা নতুন বন্দির কোয়ারেন্টাইন রক্ষা করতে কোনো বেগ পেতে হতে হচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি করোনা কালীন সময়ে অভ্যন্তরে থাকা বয়স্ক বন্দিদের জন্য একটি ওয়ার্ড করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে বিশেষ তদারকি করা হচ্ছে। এই অবস্থায় যখন চলছিলো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার তখন হঠাৎ করে গত ৭ ই মে অসুস্থ হয়ে পড়েন কানাইঘাটের বড়াইগ্রামের আহমদ হোসেন। তার বয়স ৫৩ বছর। একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তিনি গত ৫ই মার্চ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কারান্তরীণ হন আহমদ হোসেন। এরপর থেকে তাকে কারাগারের ‘রজনীগন্ধা-২’ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। ওই ওয়ার্ডে তিনি ছাড়া মোট ৮৩ জন বন্দি রয়েছেন। গত ৩০ মার্চ ওই ওয়ার্ড থেকে সর্বশেষ বন্দি বের হন। এরপর থেকে সব বন্দিরা বলতে গেলে এক ভাবে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। কিন্তু করোনার ঘটনার সূত্রপাত গত ৭ মে। কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- হাজতি আহমদ হোসেন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হন। এ কারনে ওই দিনই তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে ডাক্তার ও নার্সরা মিলে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এতে উন্নতি হয়নি ওই হাজতি রোগীর। অবস্থান অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ডাক্তাররা ওই রোগির উপসর্গ দেখে করোনা ‘সন্দেহ’ করেন। এবং তাকে পাঠিয়ে দেন সিলেটের করোনা চিকিৎসা সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তির পর তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে আহমদ হোসেন মারা যান। কিন্তু মারা যাওয়ার আগেই তার নমুনা সংগ্রহ করে ওসমানীর ল্যাবে প্রেরন করা হয়। রাতে ল্যাব থেকে রিপোর্ট এসেছে পজেটিভ। অর্থ্যাৎ আহমদ হোসেন করোনা আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের অবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন- রোববার মারা যাওয়ার আগেই ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মারা যাওয়ার পর তার রিপোর্ট এসেছে পজেটিভ। এরপর থেকে তার লাশ ওসমানীর মর্গে রাখা হয়। এখন কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী পোস্টমর্টেমের পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। আর রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর সিলেট কারাগারে দেখা দিয়েছে করোনা আতঙ্ক। কারাগারের ভেতরে বর্তমানে বন্দি সংখ্যা প্রায় ২৭০০। তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই গত দুই সপ্তাহ ধরে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষ্যাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা এখন ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন। ফলে হঠাৎ করে এক বন্দি করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলা সুপার আব্দুল জলিল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ওই বন্দি কীভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন সে বিষয়টির এখনো অনুসন্ধান চলছে। তবে- তার সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন ১১০ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে কেউ করোনা আক্রান্ত কী না সেটিও পরে দেখা হবে। তিনি বলেন- করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওই হাজতি যে ওয়ার্ডে থাকতেন সেই ওয়ার্ডেও ৮৩ জন বন্দিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ওই রোগীর সংস্পর্শে যেসব ডাক্তার ও নার্স ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারী এসেছেন তাদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কারাগারের অভ্যন্তরে যাতে করোনা ভাইরাস না ছড়ায় সেদিকে বিশেষ নজরদারি রয়েছে। বিশেষ করে অসুস্ত রোগীদের আলাদা করে রাখা হচ্ছে। এদিকে- করোনা আক্রান্ত হওয়া মারা যাওয়া হাজতি আহমদ হোসেনের মরদেহ রোববার রাত থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়- কারাবিধি অনুযায়ী পোর্স্টমর্টেমের পর ওই মারা যাওয়া ওই রোগীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
দৈনিক বাংলা পত্রিকা /শফিউল আলম মারুফ
Facebook Comments