রবিবার রাত নয়টা । উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও বাসভবনের গাঁ ঘেঁষা গফরগাঁও পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা বদরুল আলম সড়ক । চারিদিকে নীরব-নিস্তব্ধতা , ভূতুড়ে পরিবেশ, এ সড়ক দিয়ে গত ৪ দিন একজন মানুষও হেঁটে যায়নি। এ সময় পৌর মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন নিজের পরিচয় দিয়ে মাইকে ঘোষনা করেন আপনাদের বাড়ির গেইটের সামনে সামনে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে আপনারা তালিকা অনুযায়ি খাদ্য ও ওষুধগুলো নিয়ে যান। মাইকের ঘোষনা শুনে বয়স্কদের সাথে বাড়ির ক্ষুধার্ত শিশুটিও গেইটের কাছে এগিয়ে আসে খাদ্য নিতে। যাদের কাছে গত দুইদিনে করোনার চেয়ে ক্ষুধার ভয় ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছিল ।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন গফরগাঁও পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা বদরুল আলম সড়কের বাসিন্দা একজন নারী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় । উপজেলা প্রশাসন রাত সাড়ে এগারটায় ওই মহল্লার ২৩ টি বাড়ির ৬০টি পরিবারকে লকডাউন থোষনা করেন। উপজেলা প্রশাসন নির্দেশ প্রদান করে জরুরী প্রয়োজন ব্যতিত লকডাউন চলাকালীন সময়ে উল্লেখিত বাড়ির বাসিন্দাগন কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না অন্য এলাকার কোন লোক এইসব বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না। মধ্যরাতে হঠ্যাৎ লকডাউনের ঘোষনার পর এইসব বাড়ির বাসিন্দারা বিপাকে পড়ে যায় । তিন দিন পর শনিবার সকাল থেকেই ওই বাড়িগুলোর বাসিন্দা অনেক পরিবারের শিশুদের শিশু খাদ্য, অস্যুস্থ রোগীদের ওষুধ এমনকি অনেক পরিবার থাদ্য সংকটে পড়ে যায় । শরনাপন্ন হয় বাড়ির কাছের উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে। ফোন করে এমনকি বাড়ি থেকে জোরে জোরে চিৎকার করে তারা সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকে। অনেক পরিবারের সদস্যরা কান্না করতে করতে বলতে থাকে তাদের ঘরে খাদ্য না পৌছালে তাদের শিশু সন্তানটি মারা যাবে। ভয় ও আতংকে কেউ তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ায়নি।
এমত অবস্থায় বিকল্প কোনও পথ না পেয়ে এই ৬০টি পরিবারের মধ্যে আটকে থাকা ফরিদুল আলম সজিব এই মহল্লাবাসীকে সাহায্যের জন্য রবিবার সন্ধ্যায় ফেইসবুকে ষ্টাটাস দেয়। ষ্টাটাসটি স্থানীয় এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের নজরে এলে তিনি এইসব অসহায় পরিবারকে সাহায্যের জন্য দ্রæত পদক্ষেপ নেন । এই ৬০ টি পরিবারকে তাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এবার ত্রাতার ভূমিকায় স্থানীয় এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ও পৌর মেয়র এসএম ইকবাল হোসেন মেয়র। রাত সাড়ে আটটার দিকে পৌর মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা এসএম ইকবাল হোসেন সুমনের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা তালিকা তৈরী করে মুক্তিযোদ্ধা বদরুল আলম সড়কের ২৩টি বাড়ির গেইটের সামনে গিয়ে ৬০টি পরিবারের জন্য ১০দিনের খাদ্য রেখে আসে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য ১০দিনের জন্য চাউল ,ডাল, তৈল ,মসল্লা, শিশু খাদ্য, ওষুধ, সাবান ,লবনসহ প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী সব জিনিস সব জিনিস দেওয়া হয় । খাবার পেয়ে খুশী ৪দিন ধরে লকডাউনে থাকা পরিবারগুলো ।
স্থানীয় এমপি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে তারা কাজটি করেছেন। লকডাউন পর্যন্ত এই সাহার্য্য তারা চালিয়ে যাবেন।
দৈনিক বাংলা পত্রিকা/ আতাউর রহমান মিন্টু
Facebook Comments