সকালে বাজারে গেলেই জগাদার সঙ্গে দেখা হয়। ট্রেডমার্ক কমলারঙের ওপর খয়েরি বাটিক ছাপ ফতুয়া আর নীল চেক চেক লুঙ্গি পরে নিচু হয়ে বেছে বেছে শাকসবজি, মাছ কেনেন। চোখাচোখি হলে হাসেন, কখনো সৌজন্য বিনিময়… তারপর আমিও নিজের কাজে এগিয়ে যায়, উনিও তাই। তা গত কয়েকদিন ওঁকে বাজারে দেখতে না পেয়ে কাল বিকেলে ওঁর বাড়িতেই চলে গেলাম।
-কী দাদা, শরীর ভালো তো? আপনাকে কয়েকদিন বাজারে না দেখে…
দাদা খুব খুশি, বললেন, “আরে হ্যাঁ সব ভালো। আসলে, বুঝলে না, আমি এখন লাইনের লোক হয়ে গেছি!”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, লাইনের লোক তো আমরা গুন্ডা বা বদমাইশদের বলতাম!জগাদা আমার মনের কথা ধরতে পেরেই বললেন, ” তা ভাই, কী আর বলি, ছোটবেলায় সবাই বলতো, লাইন দিয়ে যাবি আসবি। ইস্কুলে প্রার্থনায় লাইন, খাবার ঘরে লাইন, রেশনের দোকানে লাইন, পুজো প্যান্ডেলে লাইন, এইভাবে লাইন দিতে দিতে বড় হয়ে জানলাম লাইন মারা কথাটা আবার ভালো নয়!”
-হা হা হা, তাও ঠিক, কিন্তু দাদা…
-হ্যাঁ ভাই বলছি। আগে জানতাম ডেড লাইন মানে কারেন্ট না থাকা তার, কিন্তু অফিসে ঢুকে শুনলাম সে অন্য এক ভয়ঙ্কর জিনিস!
-উফ, সে আর বলতে!
-আমার
ছিল কপি এডিটিং এর কাজ, লাইন ধরে ধরে মেলাতে হতো, বেলাইন হলেই বিপদ। তবু
কাজে একবার ভুল হয়েছিল, বস ডেকে বললেন, ‘ তাও ভালো ক্লায়েন্ট কিছু বলেনি,
তাই এবারের মতো লাইফলাইন পেয়ে গেলেন!’
-কিন্তু দাদা..
-আহা, বলছি বলছি! তারপর বিয়ে হলো, সংসার হলো, মেন লাইন, কর্ড লাইনে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে ছেলে মেয়ের লাইনটানা খাতা আর বৌয়ের আইলাইনার কেনা হলো। এতদিন ধরে লাইন দিতে দিতে অবশেষে স্বস্তি। আর লাইন দিতে হবে না!
এখনো তো বুঝলাম না দাদা…
-বুঝলে না? ছেলে ল্যাপটপ কিনে শিখিয়ে দিয়েছে, আর আমি অনলাইনে সব কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছি ভায়া!
-শাকসবজিও!
-সমস্ত কিছু! নাড়িকাটার ছুরি থেকে মড়ার খাট, সব পাবে লাইনে! অথচ কেনাকাটার জন্যে লাইন দিতেও হবে না! কেমন মজা বলো তো হে!
ট্রামলাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, লাইন ধরে সবাই তো এগোচ্ছি, কিন্তু সঠিক দিকে এগোচ্ছি তো!! কে জানে বাবা, ভারচুয়াল আর অ্যাকচুয়াল কিন্তু আলাদা হয়!
লেখক পরিচিতি: এককালে ছিলেন আপিসের বড়বাবু। এখন বাবু হয়ে বসে শব্দ নিয়ে খেলেন লোফালুফি।পানাসক্ত নন, তবে PUN -এ শক্ত ইস্যুকেও ঘায়েল করেন অক্লেশে। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে, বিয়ে-পুজো-ছাতা-কম্বলে, সোশ্যালে-অ্যান্টি সোশ্যালে কলম ছোটে জোরকদমে। এবার ব্লগে কদম রাখলেন তিনি।
সৌজন্যেঃ সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকা
Facebook Comments